• ১৮ অক্টোবর ২০২৪ | ৩ কার্তিক ১৪৩১

Shongbad Protikshon || সংবাদ প্রতিক্ষণ

আইয়ুব (আ.) যে দোয়ায় রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আইয়ুব (আ.) যে দোয়ায় রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন

আইয়ুব (আ.) যে দোয়ায় রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন

নবী আইয়ূব (আ.) এর কথা পবিত্র কোরআনুল কারিমের ৪টি সূরার ৮টি আয়াতে এসেছে। সূরাগুলো হচ্ছে নিসা ১৬৩, আন‘আম ৮৪, আম্বিয়া ৮৩-৮৪ এবং সোয়াদ ৪১-৪৪।
আইয়ুব (আ.) দীর্ঘদিন জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন। অবস্থা এমন হয়েছিল যে অসুস্থতার দিনগুলোতে তার সন্তান-সন্ততি, বন্ধু-বান্ধব সবাই তার থেকে দূরে সরে গিয়েছিল। অবশেষে তিনি মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করেছিলেন। তার দোয়ার ভাষা ছিল খুবই নমনীয় সুন্দর।

রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা আইয়ুব (আ.) এর দোয়া কবুল করেছিলেন। দোয়াটি পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা তুলে ধরেছেন।

দোয়াটি হলো, اَنِّیۡ مَسَّنِیَ الضُّرُّ وَ اَنۡتَ اَرۡحَمُ الرّٰحِمِیۡنَ 

উচ্চারণ: ‘আন্নী মাসসানিয়াদ দুররু ওয়াআনতা আরহামার রা-হিমীন’।

অর্থ: ‘আমি তো দুঃখ-কষ্টে পড়েছি, আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু’! (সূরা আম্বিয়া: ৮৩)

দোয়ার ধরণ অত্যন্ত পবিত্র, সূক্ষ্ম ও নমনীয়! সংক্ষিপ্ত বাক্যের মাধ্যমে নিজের কষ্টের কথা বলে যাচ্ছেন এবং এরপর একথা বলেই থেমে যাচ্ছেন- ‘আপনি করুণাকারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ’। কোনো অভিযোগ ও নালিশ নেই, কোনো জিনিসের দাবি নেই। তাতেই আল্লাহ খুশি হয়ে তার দোয়া কবুল করলেন। পরবর্তী আয়াতে দোয়া কবুল হওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম, তার দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিলাম, তাকে তার পরিবার-পরিজন ফিরিয়ে দিলাম এবং আরো দিলাম তাদের সঙ্গে তাদের সমপরিমাণ, আমাদের পক্ষ থেকে বিশেষ রহমতরূপে এবং ইবাদতকারীদের জন্য উপদেশস্বরূপ’। (সূরা আম্বিয়া: ৮৪)

আইয়ুব (আ.) এর অসুস্থতার দিনগুলো যেমন ছিল

পবিত্র কোরআন থেকে শুধু এতটুকু জানা যায় যে, তিনি কোনো দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে সবর করে যান এবং অবশেষে আল্লাহর কাছে দোয়া করে রোগ থেকে মুক্তি পান। এই অসুস্থতার দিনগুলোতে তার সন্তান-সন্ততি, বন্ধু-বান্ধব সবাই তার কাছ থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল। হাদিস থেকে জানা যায়, তিনি ১৮ বছর মসিবত ভোগ করেছিলেন। ভাই বন্ধুদের মাঝে দুজন ছাড়া সবাই ত্যাগ করে চলে গিয়েছিল। এ ২ জন সকাল-বিকাল তার কাছে আসত।

তাদের একজন অপরজনকে বলল- জেনে নাও আল্লাহর শপথ! অবশ্যই আইয়ুব এমন কোনো গুনাহ করেছে, যা সৃষ্টিজগতের কেউ করেনি। তার সাথি বলল- এটা কেন বললে? জবাবে সে বলল- ১৮ বছর থেকে সে এমন কঠিন রোগে ভুগছে অথচ আল্লাহ তার প্রতি দয়াপরবশ হয়ে তাকে তা থেকে মুক্তি দিচ্ছে না।

এ কথা শোনার পর সাথিটি আইয়ুব (আ.)-কে সেই কথা জানিয়ে দিল। তখন আইয়ুব (আ.) তাকে বললেন- আমি জানি না তুমি কী বলছ, তবে আল্লাহ জানেন পূর্বে আমি কখনো কখনো ঝগড়ায় লিপ্ত ২ জনের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এটাও শুনতাম যে, তারা আল্লাহর কথা বলে বলে নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করছে। তখন আমি বাড়ি ফিরে তাদের পক্ষ থেকে কাফফারা আদায় করতাম এই ভয়ে যে, তারা হক ছাড়া অন্যকোনো ভাবে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করেনি তো?

ঘটনা বর্ণনা করতে করতে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আইয়ুব (আ.) তার প্রাকৃতিক কাজ সারতে বের হতেন। কাজ সারার পর তার স্ত্রী তার হাত ধরে নিয়ে আসতেন। একদিন তিনি তার প্রাকৃতিক কাজ সারার পর তার স্ত্রীর কাছে ফিরতে দেরি করছিলেন এমন সময় আল্লাহ তাআলা আইয়ুব (আ.) এর কাছে ওহি পাঠালেন যে, ‘আপনি আপনার পা দ্বারা ভূমিতে আঘাত করুন, এই তো গোসলের সুশীতল পানি ও পানীয়’। (সুরা সোয়াদ: ৪২)

তার স্ত্রী তার আগমনে দেরি দেখে নিজেই এগিয়ে গিয়ে তার কাছে পৌঁছলেন। তখন আইয়ুব (আ.) এর যাবতীয় মসিবত দূর হয়ে তিনি আগের মতো সুন্দর হয়ে গেলেন। তার স্ত্রী তাকে চিনতে পারলেন না। তাকে বললেন, হে মানুষ! আল্লাহ আপনার ওপর বরকত দিন, আপনি কি ওই বিপদগ্ৰস্ত আল্লাহর নবীকে দেখেছেন? আল্লাহর শপথ, যখন সে সুস্থ ছিল তখন সে ছিল আপনার মতোই দেখতে। তখন আইয়ুব (আ.) বললেন, আমিই সেই ব্যক্তি।

আইয়ুব (আ.) এর ২টি উঠান ছিল। একটি গম শুকানোর অপরটি যব শুকানোর। আল্লাহ তাআলা সে ২টির উপর দুখণ্ড মেঘ পাঠালেন। এক খণ্ড মেঘ গমের উঠোনে এমনভাবে স্বর্ণ ফেললো যে, সেটি পূর্ণ হয়ে গেল। অপর মেঘখণ্ডটি সেটির উপর এমনভাবে রৌপ্য বর্ষণ করল যে, সেটাও পূর্ণ হয়ে গেল। (সহিহ ইবনে হিব্বান: ৭/১৫৭, হাদিস: ২৮৯৮, মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৬৩৫, ৪১১৫)