• ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৩ আশ্বিন ১৪৩১

Shongbad Protikshon || সংবাদ প্রতিক্ষণ

৪০ বছর ধরে শাক বিক্রিতে চলছে মজনুর সংসার

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

৪০ বছর ধরে শাক বিক্রিতে চলছে মজনুর সংসার

৪০ বছর ধরে শাক বিক্রিতে চলছে মজনুর সংসার

নাম মজনু মিয়া। বয়স ৬০ পেরিয়েছে। মুখে দাঁড়ি। হাসিমাখা মুখ নিয়ে সাধু ভাষায় কথা বলেন। কোমর কিংবা মাথায় শাকভর্তি খাঁচা নিয়ে ঘুরছেন বাজারের এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্ত। নানা রকমের শাক রয়েছে বলে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন। কেউ কিনছেন। কেউবা দেখছেন। প্রায়ই এমন দৃশ্যের দেখা মেলে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া পৌর বাজারের অলি-গলিতে। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পৌরসদরে হেঁটে হেঁটে শাক বিক্রি করেন মজনু মিয়া।
জানা গেছে, উপজেলার তারাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মজনু মিয়া। গত ৪০ বছর ধরে তিনি উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারসহ পার্শ্ববর্তী হোসেনপুর উপজেলায় গিয়ে শাক বিক্রি করছেন। এটাই তার একমাত্র পেশা। এর মাধ্যমেই তিনি সামলাচ্ছেন বড় একটি পরিবার।

মজুন মিয়ার সঙ্গে আলাপ হলে তিনি জানান, নিজের জমি নেই। প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি এ পেশার সঙ্গে জড়িত। এ থেকে যা আয় করেন তা দিয়েই চলছে তার সংসার। চার মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জনক তিনি। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। একজন পোশাককর্মী। অপর এক মেয়ে দুই নাতি নিয়ে তার বাড়িতেই বসবাস করছেন। ছেলে পড়াশোনা করে চাকরির চেষ্টা করছেন। বর্তমানে ছয় সদস্যের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব পালন করছেন মজনু মিয়া।

মজনু মিয়া জানান, পতিত জমি, বাগান এবং বাড়ির পাশের ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় থেকে প্রতিদিন কলমিশাক, কচুশাক, তেলাগুচিপাতা, সজনে পাতা, ডুলমানি, দেশি নিমপাতা, আমপুরা, বরতুয়া জাতের শাক সংগ্রহ করেন তিনি। এরপর সেগুলো ভালো করে ধুয়ে আঁটি বেঁধে খাঁচায় করে বাজারে নিয়ে যান। সপ্তাহের দুইদিন পার্শ্ববর্তী হোসেনপুরে এবং বাকি পাঁচদিন পাকুন্দিয়া পৌরসদর বাজারে হেঁটে হেঁটে শাক বিক্রি করেন। প্রতি আঁটি শাক ১৫-২০ টাকা ধরে বিক্রি হয়। গড়ে দৈনিক ৪০০-৫০০ টাকার মতো বেচতে পারেন। এ দিয়েই জোড়াতালি দিয়ে চলছে তার সংসার।

মজনু মিয়া বলেন, শাক বিক্রি নিয়ে অনেক সময় কেউ কেউ হাসি তামাশা করেন। কিন্তু আমি তাতে কর্ণপাত করি না। আমি হালালভাবে জীবিকা নির্বাহ করছি। সারাদিন পরিশ্রম করে নানা জাতের শাক সংগ্রহ করি। এরপর সেগুলো ধুয়ে আঁটি বাঁধি। এতে কোনো ভেজাল নেই। টাটকা শাক অনেকেই পছন্দ করেন। তাই এগুলোর বেশ চাহিদা রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, মজনু মিয়া একজন পরিশ্রমী মানুষ। প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বর্তমান সময়ে সমাজের অনেকেই অসৎ উপায় বেছে নেন। কিন্তু মজনু মিয়ার সাদামাটা সহজ-সরল মানুষ। তিনি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে পরিবারের জন্য হালাল উপার্জন করছেন। মজনু মিয়া নিঃসন্দেহে একজন খাঁটি মানুষ।