• ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৩ আশ্বিন ১৪৩১

Shongbad Protikshon || সংবাদ প্রতিক্ষণ

বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ১৫:৩১, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সঠিক অর্থনৈতিক সংস্কার হলে বাংলাদেশে উন্নয়ন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনে বেসরকারি খাতে মার্কিন বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহায়তা বাড়বে বলে জানিয়েছে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা সফররত মার্কিন প্রতিনিধিদল আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচ্যাম) নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এই আগ্রহ ব্যক্ত করে।

বৈঠকের পর ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস এক বার্তায় জানায়, জ্বালানি নিরাপত্তা থেকে শুরু করে ডাটা সেন্টার এবং পরিবহন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসাগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। সঠিক অর্থনৈতিক সংস্কার করা হলে আমেরিকার বেসরকারি খাত বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনে সহায়তা করতে পারে।

এর আগে গতকাল সকালে তিন দিনের সফরে যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব দপ্তরের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে ঢাকা পৌঁছেছে উচ্চপর্যায়ের পাঁচ সদস্যের মার্কিন প্রতিনিধিদল। বিকেলে দিল্লি হয়ে ঢাকায় আসেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। এ ছাড়া প্রতিনিধিদলে রয়েছেন ইউএসএইডের এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কৌরসহ আরও দুজন। সফরে প্রতিনিধিদল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকসহ বেশ কয়েকজন উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করবে। সফরে সম্পর্ক জোরদারসহ গুরুত্ব পাবে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতার নানা বিষয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র কালবেলাকে জানায়, আজ রোববার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধিদলটি বৈঠক করবে। পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গেও বৈঠক করবে প্রতিনিধিদলটি। এ ছাড়া পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ওয়ার্কিং লাঞ্চ করবে দলটি। পৃথকভাবে দলটির কয়েকজন সদস্যের বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে টেকনিক্যাল মিটিং করার কথা রয়েছে।

জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য আলোচনা করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আলোচনায় গুরুত্ব পাবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে। এ ছাড়া বাংলাদেশ যেন ঘুরে দাঁড়ায়, তাই দেশের বর্তমান সংকট উত্তরণের চাহিদাগুলো জানতে চাইবে ওয়াশিংটন। ডোনাল্ড লু ঢাকা আসার আগে দিল্লিতে ওয়াশিংটন-দিল্লি প্রতিরক্ষা বিষয়ক ইন্টারসেশনাল সংলাপে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন। এ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় ইস্যুর পাশাপাশি আলোচনায় গুরুত্ব পায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকটি সূত্রে জানা যায়, এ সফরে আর্থিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীলতা রক্ষায় ঢাকার সঙ্গে নিরাপত্তাসহ আইপিএস ইস্যুতেও আলোচনায় আগ্রহী ওয়াশিংটন। এ ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

মার্কিন প্রতিনিধিদলের কথা গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, যে কোনো দেশে মার্কিন বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য কয়েকটা পূর্বশর্তের মত আছে। তারা যেটা চায় সেটা হচ্ছে আইন, নিয়মনীতির পরিচ্ছন্নতা। তারা আর্থিক ব্যবস্থাপনার কথা যেটা বলছে, সেটা হচ্ছে দুর্নীতিমুক্ত একটা আর্থিক ব্যবস্থাপনা। যদি আমরা তা করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য একটা জায়গা তৈরি হবে। সেইসঙ্গে আমরা ব্যবসাকেও রাজনীতিকরণ করে ফেলি। এখানে যখনই রাজনীতি নিয়ে আসা হবে, তখন ব্যবসা আর ব্যবসা থাকে না। সেটা রাজনীতির অংশে রূপান্তরিত হয়। যেটা মার্কিন বিনিয়োগকারীরা পছন্দ করে না। এ কারণে আমাদের এখানে বাইরের বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ পায় না। তাই এ জায়গা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির কালবেলাকে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটা আইন আছে (ফরেন এন্টিকরাপশন প্র্যাকটিস অ্যাক্ট)। অর্থাৎ কোনো মার্কিন কোম্পানি পৃথিবীর যে কোনো দেশে কাজ করতে গিয়ে দুর্নীতির সম্পৃক্ততা পেলে সেখানে আগ্রহ দেখাবে না। যার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোম্পানি, সরকারি তো প্রশ্নই আসে না—বেসরকারি কোম্পানি গুলোও যে দেশগুলোতে দুর্নীতির আশঙ্কা থাকে, সেখানে বিনিয়োগ করতে চায় না।

তিনি বলেন, তারা যেটা চায় সেটা হচ্ছে আইন, নিয়মনীতির পরিচ্ছন্নতা। বাংলাদেশে একটা সমস্যা হচ্ছে আমরা এমনভাবে আইনগুলোকে বানিয়ে রাখি, অনেক সময় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বুঝতে পারে না যে আইনগুলোর ব্যাখ্যাটা কী। এজন্য আইনগুলোকে পরিচ্ছন্ন করতে হবে, যাতে পরিষ্কার বোঝা যায় যে জিনিসটা কী এবং এমন প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারাই সম্পৃক্ত থাকবেন, তারা সবাই এ বিষয়ে একমত হবেন। এটা যদি হয়, তাহলে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ থাকবে। কারণ, তারা তো স্বল্প সময়ের জন্য আসবে না, ২০-৩০ বছরের লক্ষ্য নিয়ে আসবে। তাই তারা লম্বা সময়ের জন্য নিয়মনীতির নিশ্চয়তা চায়।

সাবেক এই রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, বাংলাদেশে একটা বড় জটিলতা হচ্ছে আমাদের এখানে যদি কোনো সমস্যা তৈরি হয়, তার সমাধানের কোনো জায়গা নেই। কোনো একটা জটিলতা যদি তৈরি হয়, তখন আপনি কোথায় যাবেন এই অনিশ্চয়তায় তারা ভোগে। কাজেই আমাদের এখানে ডিসপিউট রেজুলেশন মেকানিজম (বিরোধ নিষ্পত্তির) জন্য একটা সঠিক জায়গা তৈরি হতে হবে। তাহলে বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণের জায়গা তৈরি হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংক ব্যবস্থাকেও সাবলীল করতে হবে। এই জিনিসগুলো পরিচ্ছন্ন করা গেলে এখনো বাংলাদেশে বড় ব্যবসা করার সুযোগ আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, আর্থিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের প্রয়োজনে সহায়তা করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করবেন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশি কর্মকর্তারা।’

মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনার সুনির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আলোচনা শুরুর আগে আমি কোনো ধরনের মন্তব্য করতে চাই না, যা আলোচনার স্বাভাবিকতাকে ক্ষুণ্ন করবে। এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সরকার সবার সঙ্গে পারস্পরিক সুবিধাজনক সম্পর্কের দিকে যেতে চায়।

তিনি বলেন, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের মানুষের আন্তর্জাতিক বিষয়ে আগ্রহ রয়েছে। সফরে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী লু ‘আমাদের অংশীদারদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীলতার প্রচারে’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করবেন।

এর আগে পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিদলের যে কোনো সফর সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। তারা অর্জনযোগ্য বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন এবং জোর দেন যে, মার্কিন ভিসা নীতি দুই দেশের সম্পর্ককে প্রভাবিত করবে না।